চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে শনিবার (৩০ আগস্ট) রাতে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট-২ সংলগ্ন এলাকায় এক নারী শিক্ষার্থী ভাড়া বাসায় প্রবেশের সময় দারোয়ানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এসময় উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থী বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে জানালে তার সহপাঠীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। একপর্যায়ে স্থানীয়রা মাইকিং করে আশপাশের লোকজন ডেকে আনে এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৩টা পর্যন্ত ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী।
প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে লাঠি, লোহার রড, মাচেটি ও ইটপাটকেল ব্যবহার করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় জোবরা গ্রামে ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রমতে, অন্তত ২০০টির বেশি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। ঘরের আসবাবপত্র, টেলিভিশন, ফ্রিজসহ গৃহস্থালি সামগ্রী ভেঙে ফেলা হয়। অনেক ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি), প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, কয়েকজন শিক্ষক, সাংবাদিক ও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ জন আহত হন। গুরুতর আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে সকল ধরনের মিছিল, সমাবেশ ও জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে। এ ঘটনায় সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২১ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সংঘর্ষ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে উভয় পক্ষ। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, গ্রামবাসী পরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। অপরদিকে স্থানীয়দের দাবি, প্রথমে শিক্ষার্থীরাই গ্রামে গিয়ে ভাঙচুর ও হামলা চালায়, যার প্রতিক্রিয়াতেই গ্রামবাসী একজোট হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-গ্রামবাসীর এই সংঘর্ষে ব্যাপক হতাহতের পাশাপাশি যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা দীর্ঘদিনের পারস্পরিক সম্পর্কের মাঝে এক গভীর অবিশ্বাস তৈরি করেছে। প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে এ ঘটনার সঠিক কারণ ও ভবিষ্যতে এ ধরনের সংঘর্ষ রোধের পথ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: আল আমিন সরকার
মোবাইল: +8801676791162
অফিস : 378/6, East Goran, Khilgaon, Dhaka-1219.
ইমেইল : sbservicesltd2025@gmail.com
Design & Development By HosterCube Ltd.