ফ্রান্সজুড়ে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে দেশজুড়ে সহিংসতা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বুধবারের এই বিক্ষোভে অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফরাসি পুলিশ। মূলত বামপন্থী দলগুলোর ডাকে ‘ব্লক এভরিথিং’ বা ‘সবকিছু আটকে দাও’ স্লোগানকে সামনে রেখে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
এই তীব্র সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতি এবং নতুন পেনশন সংস্কার আইন। এই আইনে পেনশনের জন্য অবসরের বয়সসীমা ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ বছর করা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এছাড়াও, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য ও বৈষম্য বেড়ে যাওয়াকেও এই বিক্ষোভের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্রঁসোয়া বাইরুর সরকারের কঠোর বাজেট নীতির ফলে দেশে দারিদ্র্য ও বৈষম্য তীব্রতর হয়েছে বলে অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের। তার উপর, পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হেরে ফ্রঁসোয়া বাইরু পদত্যাগ করার পর ম্যাক্রোঁ তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকোর্নুকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ আরও বৃদ্ধি পায়।
বুধবার রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন বড় শহরে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। তারা আবর্জনার বাক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়, মহাসড়ক অবরোধ করে এবং বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশজুড়ে প্রায় ৮০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে এবং ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর রেনে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়ো জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, এই বিক্ষোভের জন্য অনলাইনে সংঘবদ্ধ হয়েছে এবং কিছু বামপন্থী রাজনীতিবিদ তাদের সমর্থন দিচ্ছেন।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত, দেশজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং আরও বিক্ষোভের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করলেও বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।